ভারতের তফসিলী জাতি, তফসিলী উপজাতি ও অনগ্রসর জাতির (Sc, St,Obc) লোকদের সমস্যাগুলো কি কি এবং তার সমাধান কি ?

1
    Sc, St, Obc দের মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষিত অথচ দায়্ত্বহীন লোকদেরকে দেখেই এই মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে৷ এটা আত্ম সমীক্ষামূলক  লেখা৷

                ভারতের তফসিলী জাতি, তফসিলী উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর জাতি এদেরকে ইংরাজীতে বলা হয় সিডিউল্ড কাষ্ট, সিডিউল্ড ট্রাইব এবং আদার ব্যাকওয়ার্ড কাষ্ট৷ সংক্ষেপে বলা হয়  Sc, St, Obc . এদের সংখ্যা হল 70%  ৷ আর  মুসলমানদের সংখ্যা হল 15%  ৷ আর ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য যারা উচ্চবর্ণ তাদের সংখ্যা হল 15%  ৷ মোট— Sc St Obc 70 + upper caste 15 + minority 15 . অর্থাৎ 
70+15+15= 100 . 

            এই যে Sc, St, Obc এদের সরকারী পরিচয় হল এরা হিন্দু৷ আর এদের সামাজিক পরিচয় হল এরা শূদ্র-অস্পৃশ্য-আদিবাসী ছোটজাত৷ আর এদের সাংবিধানিক পরিচয় হল তফসিলী জাতি, তফসিলী উপজাতি, অনগ্রসর জাতি৷ এক কথায় Sc, St, Obc . এদেরকে আরো বহু নামে ডাকা হয় বা ইঙ্গিত করা হয়৷ এদেরকে দলিত-মথিত-নির্যাতিত শ্রেণী বা      ( depressed castes ) ও বলা হত৷ প্রাচীন ভারতে এদেরকেই বলা হত— অনার্য, দ্রাবিড়, শূদ্র, নমঃশূদ্র, অস্পৃশ্য,চণ্ডাল, জলচল শূদ্র, জলঅচল শূদ্র, হরিজন, অসুর, দৈত্য, দানব, রাক্ষস, অসভ্য প্রভৃতি৷ এরা কোন কালেই হিন্দু ছিলনা আর আজও এরা হিন্দু নয়৷ 
কারণ—এরা নিজেদেরকে হিন্দু মনে করেনা৷ ব্রাহ্মণরা এদেরকে ছুঁতেও রাজী নয়৷ তাহলে এরা হিন্দু হবে কি করে ? এদের উদ্ধারকর্তা, ভারতের সংবিধান প্রণেতা ডঃ আম্বেদকরের মতে এরা হিন্দু নয়৷ এদেরকে কোন মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি নেই, বেদ-গীতা-মনুস্মৃতি পড়ার অনুমতি নেই, পুরোহিত হওয়ার অধিকার নেই, শংকারাচার্য হওয়ার অধিকার নেই, গুরু হওয়ার অধিকার নেই, শাসক হওয়ার অধিকার নেই৷ তাহলে ষ্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে,যারা এদেরকে হিন্দু বলতে চায় তাদের মনে শয়তানী বা অন্য কিছু উদ্দেশ্য আছে৷ 

              এখন আলোচনা করব যে, ভারতের তফসিলী, জাতি উপজাতি ও অনগ্রসর জাতির লোকদের সমস্যা কি কি ? Sc, St, Obc রা হল ভারতের মূলনিবাসী৷  এরাই অনার্য, এরাই দ্রাবিড়, এরাই কোল, ভীল, মুণ্ডা ও আদিবাসী৷ এক কথায় এরা সকলেই ভারতের মূলনিবাসী জনগণ৷ এদের জনসংখ্যা হল 70% ৷ আর এই অনার্য, শূদ্র, দ্রাবিড়রা ব্রাহ্মণদের অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দলে দলে ব্রাহ্মণদের তৈরী হিন্দু ধর্ম পাইকারীভাবে ত্যাগ করে হাজারে-হাজারে নয় বরং লক্ষ্য-লক্ষ্য, কোটি-কোটি শূদ্র-অস্পৃশ্যরা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে কেউ ইসলাম ধর্ম, কেউ খৃষ্টান ধর্ম, কেউ বৌদ্ধ, কেউ শিখ ধর্ম গ্রহণ করে ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল, কোন লোভ কোন অস্ত্র ছাড়াই৷ এই হিন্দু ধর্ম ত্যাগ কারীরা হল Minorities . এরা সকলে মিলে হল 85%  জনগণ৷ অতএব Sc, St, Obc দের মত মুসলমান,খৃষ্টান, শিখ, বৌদ্ধ,জৈন্যরাও মূলনিবাসী৷ 

                 এদের সমস্যা হল— 
(1) Sc, St, Obc রা 85% জনগণ হয়েও গণতাণ্ত্রিক ভারতে পরাজিত৷
(2) Sc, St, Obc রা ব্রাহ্মণদের নিকট ঘৃণিত, লাঞ্ছিত,অপমানিত ও বঞ্চিত৷  
(3) Sc, St, Obc বা শূদ্র সমাজকে, ব্রাহ্মণরা দাস, দস্যু, রাক্ষস, অনার্য, অসভ্য হিসাবে গণ্য করেছে আর শূদ্ররা এখনও ভীষণ তৃপ্ত ও সন্তুষ্ট৷

(4) Sc, St, Obc রা শ্রমিক, কৃষক ক্ষেত মজুর হিসাবে সেবক বলে গণ্য৷ 
( 5) বলা হয় যে, প্রাচীন গ্রীসে মোট 1 লক্ষ্য স্বাধীন নাগরিক ছিল আর 4 লক্ষ্য ক্রীতদাস ছিল৷ বর্তমান ভারতে 85% জনগণ ক্রীতদাস বা পরাজিত আর 15% উচ্চবর্ণরা স্বাধীন,শাসক, প্রভু,মনিব ও মালিক৷   কি আশ্চর্য!
(6) Sc, St,Obc রা দাস, ক্রীতদাস, ও কাজের লোক হিসাবে পরিগণিত৷ 

(7) বলা হয় Sc, St, Obc রা পূর্ব জন্মের পাপের ফল ভোগ করছে আর ব্রাহ্মণরা সেবা নিয়ে পাপ ক্ষয় করছে৷ (8) Sc, St, Obc রা 70%  আর মুসলমানরা 15%=মোট 85% . আর  গণতণ্ত্রে সংখ্যাগরিষ্টরা বিজয়ী হয়৷  ভারতে 15% জনগণই বিজয়ী হচ্ছে৷ 
(9) সংবিধানের 17 নং ধারায় "অস্পৃশ্যতা বিলুপ্ত করা হল" বলার পরও সংবিধান অমান্য করে স্পৃশ্য-অস্পৃশ্যতা অবাধে রমরমিয়ে চলছে৷

(10) Sc, St, Obc আর মুসলমানরা রাজনীতি জানেনা,সমাজবিজ্ঞানও জানেনা৷ ফলে গণতণ্ত্র আসার পরও  চিরস্থায়ী পরাজিত হয়ে আছে৷ 
(11) Sc, St, Obc & Minorities রা রাজনীতি,কূটনীতি,কলাকৌশল, ষড়যণ্ত্র, চক্রান্ত কিছুই জানেনা৷
(12) Sc, St, Obc রা ধর্ম, রাজনীতি, কূটনীতি, ইতিহাস, শত্রু, মিত্র, আন্দোলন, সংগঠন সম্পর্কে সজাগ নয়,তা তাদের কার্যকলাপেই প্রমাণিত৷

(13)শূদ্র সমাজ—জ্যোতিরাও ফুলে, পেরিয়ার রামস্বামী,ডঃ আম্বেদকর, যোগেন মণ্ডল, হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ, নারায়ণ গুরু,কাঁশীরাম, ফজলুল হক, কাজী নজরুল, হাজী মুহাম্মদ মহসীন,মওলানা মুহাম্মদ আলি, মওলানা শওকাত আলি,শহীদ তীতুমীর ওরফে মীর নিসার আলি,বেগম রোকেয়া কাউকে চেনেনা বলেই অনুমিত হয়৷
(14) শূদ্র সমাজ—সাইমন কমিশন, গোলটেবিল বৈঠক, সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা পুনাচুক্তি,পৃথক নির্বাচন, সংরক্ষণ কোন কিছুই জানেনা৷ 
(15) শূদ্র সমাজ-রবীন্দ্রনাথ,গান্ধীজী, সুভাষ বোস,বঙ্কিম চন্দ্র,শরৎচন্দ্র চট্টো, সুরেন্দ্র নাথ ব্যনার্জী, অমিতাভ বচ্চন, সঞ্জয় দত্তকে একডাকে চেনে৷ 


(16) শূদ্র সমাজ-ইংরাজী শিখে,ডিগ্রী প্রাপ্ত হয়ে,বুট, কোর্ট, টাই পরে গোলাম হয়ে থাকা পছন্দ করে৷ ব্রাহ্মণরা পূর্বে রাখত মূর্খ চাকর,এখন রাখে ইংরাজী শিক্ষিত চাকর৷   বাহ্ রে স্বাধীনতা!!!
(17) শূদ্ররা জানেনা যে,মুসলমানরা তাদের রক্তের ভাই৷(blood brother).
(18) আর মুসলমানরা জানেনা যে, শূদ্ররা তাদের রক্তের ভাই বা ( blood brother)এ বিষয়ে দুজনেই অন্ধকারে৷

(19) ব্রাহ্মণদের শাস্ত্রে শূদ্রদের শিক্ষা গ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল৷মহাত্মা জ্যোতিরা- ও ফুলে ও ডঃ আম্বেদকরের আন্দোলনের ফলে স্বাধীন ভারতে শূদ্র ও অস্পৃশ্যরা শিক্ষা-ডিগ্রী লাভে সক্ষম হয়ে নিজ মহাপুরুষদের উদ্দেশ্যই ভুলে গেছে৷   সাধু সাবধান!!
(20) ডঃ আম্বেদকরের গোটা জীবনে মুললমানরা বহুবার সাহায্য-সহযো-গিতা করেছে৷ বিনিময়ে আজ আম্বেদকরের আন্দোলন মুসলমান-দেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে চাই৷ মুলনিবাসী আন্দোলন RSS কে ক্ষমতাচ্যুত করবে৷ তারা চাই শুধু মুসলমানদের সহযোগিতা৷

(21) শূদ্র সমাজ, এখনও ধর্মের নামে জাত-পাত,বর্ণব্যবস্থা,জাতব্যবস্থা ও  হিন্দু নামেই ভক্ত হয়ে থাকতে চাই৷ যদিও হিন্দু নামে ব্রাহ্মণরা তাদেরকে স্পর্শ করতে বা অধিকার দিতে বিন্দুমাত্র রাজী নয়৷
(22) শূদ্র সমাজের জানা প্রয়োজন যে—ফজলুল হক,খাজা নাজিমুদ্দীন ও অবিভক্ত বাংলার মুসলিম সরকারের সাহায্যে 1946 সালে বাংলা থেকে যোগেন মণ্ডলের নেতৃত্বে বাবাসাহেব আম্বেদকর গণপরিষদের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন৷ তার ফলেই আজ তারা শিক্ষা, চাকুরীতে  সংরক্ষণের মাধ্যমে উন্নতি করতে পেরেছেন৷ এই ইতিহাস মনে রেখে আজ তাদের কর্তব্য অসহায় মুললমানদের সাহায্য করা৷

**************************
           উপরে বর্ণিত সমস্যাগুলোর সমাধান হল এই যে— 
(1) শূদ্র সমাজ বা ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ( Sc,St, Obc & Minorities ) জনগণ ভারতে মোট জনসংখ্যার 85% , তাই অবিলম্বে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক  ময়দানে হাজির হতে হবে এবং ক্ষমতা দখল করতে হবে৷
(2) ভারতে এখনও গণতণ্ত্র আছে৷ প্রতি 5 বছর অন্তর কয়েক শ' কোটি টাকা খরচ করে নির্বাচন করা হয়৷ কিন্তু ভোটের ফলাফল কি ? 68 বছর ধরে কেন্দ্রে বা রাজ্যে একই পার্টী বিজয়ী হয়ে আসছে৷ সেই 15% জনগণের পার্টীর নাম হল-"ব্রাহ্মণ্যবাদী পার্টী৷" (কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল, বীজেপী প্রভৃতি৷) ৷

(3) দিল্লীতে কংগ্রেসের ব্রাহ্মণ প্রধান মণ্ত্রী জওয়াহর লাল, ইন্দিরা গান্ধী রাজীব গান্ধী.......... নরসিংহ রাও এর পর ক্ষমতায় আরোহণ করলেন বীজেপীর ব্রাহ্মণ প্রধানমণ্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী৷
আর পঃ বাংলায় সিপিএমের ব্রাহ্মণ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পর ক্ষমতায় এলেন তৃণমূলের ব্রাহ্মণ মমতা ব্যনার্জী৷   বাহ্ কি সুন্দর ব্যবস্থা !!!!!
(4) পঃ বাংলায় বিধানসভার প্রায় 70 টি আসনে মুসলমানরা বিজয়ী হতে পারে৷  আর 79 টি আসন Sc,St দের জন্য সংরক্ষিত৷ তাহলে মুসলমান আসন 70+Sc,St 79টি= 149  টি৷ হিসাব বলছে 294 এর মধ্যে 148 টি আসন পেলেই সরকার গড়া যাবে৷ আর আমরা পাচ্ছি 149 টি৷ তাহলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় আমাদের অর্থাৎ Sc,St আর মুসলমানদের সমর্থনে সরকার গঠন করা সম্ভব৷ এর পরেও আছে Obc দের ভোট৷ এর মানে হল মুখ্যমণ্ত্রীর আসন কনফার্ম৷

(5) আমার এই তথ্যের পেছনে ইতিহাসের সমর্থন আছে৷ 1937 সালের প্রথম নির্বাচনে ব্রাহ্মণদের কংগ্রেস পার্টীকে পরাজিত করে মুসলিম লীগ, কৃষক প্রজা পার্টী আর যোগেন মণ্ডলের সিডিউল্ড কাষ্ট ফেডারেশন মিলে অবিভক্ত বাংলায় 10 বছর সরকার পরিচালিত করেছিল৷ যোগেন মণ্ডলের সমর্থনে ফজলুল হক, সোহরাওর্দী ও খাজা নাজীমুদ্দীনের সরকার গঠিত হয়েছিল৷ তখন মিলিত হলে সরকার হয়েছিল এখন মিলিত হলেও ফল একই হবে৷ 
(6) কোলকাতার প্যারেড গ্রাউণ্ডে লাখ লাখ জনতা আমাদের৷ বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটের লাইনে জনতা আমাদের, বিভিন্ন দলের মিছিলে শ্লোগান দেওয়ার জনতা আমাদের৷ বুধ দখলের জন্য সশস্ত্র জনতা আমাদের, বিভিন্ন পার্টীর রঙ বেরঙের ডাণ্ডাওয়ালা ঝাণ্ডা ওড়াবার লোক সব আমাদের৷ ব্রাহ্মণকে মুক্ষ্যমণ্ত্রী করার প্রতিযোগিতায় আত্মঘাতি লড়াই করার জনগণ আমাদের৷ এ সবই যখন আমাদের তখন রাজত্ব আমাদের নয় কেন ? 

(7) ডঃ আম্বেদকর যদি মুসলমানদের সহযোগিতায় বিজয়ী হয়ে সংবিধান না লিখতেন তাহলে দেশের আইন-কানুন, সংবিধান, গণতণ্ত্র, সবকিছুকে নস্যাৎ করে দিয়ে মনুস্মৃতি, বেদ, গীতা, রামায়ণ, মহাভারত, প্রচলন হত আর Sc,St,Obc দের সমস্ত ক্ষমতা, সমস্ত অধিকার, শিক্ষা, চাকুরী, সংরক্ষণ, দল গঠন, আন্দোলন, গণতণ্ত্র,বাক- স্বাধীনতা, নির্বাচন সব কিছুকে নির্বাসন দিয়ে, সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতা সব কিছুকে জলাঞ্জলী দিয়ে মানুষ-মানবতাকে বাদ দিয়ে শুধু ভজন-কির্তন, লীলা, গোমূত্র, গো-মল, গোমাতা, গোরক্ষা, গোদেবতা প্রভৃতি নিয়ে 24 ঘণ্টা ব্যতিব্যস্ত হয়ে থাকতে হত৷ রাম, কৃষ্ণ, হরি, চৈতন্যসহ 33 কোটি দেবতার আরাধনা জোরে শোরে বিরাজ করত৷

(8) বাবাসাহেব আম্বেদকর বলেছেন যে —Capture the temple of power . হে ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মূলনিবাসী জনগণ! হে 5000 বছরের নির্যাতিত জনগোষ্ঠী জনগণ! তোমাদের হাতে যে মূল্যবান ভোটের ক্ষমতা দিয়ে গেলাম ,আর সুসংহত  গণতাণ্ত্রিক ব্যবস্থা দিয়ে গেলাম,আর স্বাধীন ভারতের ক্ষমতার মন্দির পার্লামেন্ট দখল করে নাও৷

        সবশেষে বলতে চাই যে, আমরা যদি আমাদের পূর্বপুরুষদের নির্দেশ মান্য করে চলি তাহলে নিশ্চয়ই একদিন আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হব৷

Post a Comment

1Comments
Post a Comment