চামচা যুগ, An Era of the Stooges. - Written by: Zakariya Molla

0

★ ভারতের সংবিধান প্রণেতা ডঃ আম্বেদকরের সুযোগ্য উত্তরসূরি মান্যবর কাঁশীরামজীর লিখিত একটি পুস্তকের নাম হল—An Era of the Stooges. এর বঙ্গানুবাদ হল, চামচা যুগ৷ 


 ★★ মান্যবর কাঁশীরামজী তাঁর লিখিত পুস্তকে বলেছেন— চামচা কাকে বলে ? চামচা কেন সৃষ্টি হয় ? চামচা কারা সৃষ্টি করে ? চামচা কারা কারা হয় ? চামচা হলে কাদের লাভ হয় ? চামচা হলে কাদের ক্ষতি হয় ? চামচাদের উদ্দেশ্য কি ? চামচাকে লালন-পালন করে কারা ? এবং কেন ? চামচা হতে কি কি যোগ্যতার প্রয়োজন হয় ? চামচা কয় রকমের হয় ? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর কাঁশীরামজী তাঁর উক্ত পুস্তকে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন৷ 


 ★★★ তিনি উক্ত পুস্তকে আরো বলেছেন যে, চামচা বিভিন্ন স্তরের হয়৷ তাঁর মতে চামচাদের স্তরবিন্যাস হল— 

(1) গ্রাম্য স্তরের চামচা৷ 
(2) পঞ্চায়েত (panchayet) স্তরের চামচা৷ 
(3) ব্লক (block) স্তরের চামচা৷ 
(4) মহকুমা(S.Div.) স্তরের চামচা৷ 
(5) জেলা (district) স্তরের চামচা৷ 
(6) রাজ্য (state) স্তরের চামচা৷ 
(7) সর্বভারতীয় (National) স্তরের চামচা৷ 

(8) অান্তর্জাতিক (International) স্তরের চামচা৷ উপরোক্ত বিভিন্ন রকমের চামচা আমাদের ভারতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়৷ এখন চামচাদের চাহিদাও ভীষণ এবং কদরও বেশী আর সৃষ্টিও হচ্চে প্রচুর সংখ্যায়৷ 


 ★★★★ চামচার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল নেমক হারামী না করা৷ অর্থাৎ চামচা আর নেমক হারাম একে অপরের বিপরীত৷ লোকে চামচাকেও পছন্দ করে না, আবার নেমক হারামকেও পছন্দ করে না৷ কারণ হল, যে চামচা হয় তার প্রথম কাজ হল সে তার নিজের সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে তার নিজ জাতির তথা মানব সমাজের বৃহত্তর ধ্বংসসাধন বা ক্ষতিসাধন করার জন্য তার অর্থদাতাকে সমর্থন ও সহযোগিতা করা৷ আর নেমক হারাম হল সেই ব্যক্তি, যে অবৈধভাবে অপরের সম্পদ ভোগ করে এবং ঠিক সময়ে ফাঁকি দিয়ে কেটে পড়ে৷ সে তার অর্থদাতাকে সাহায্য করে না৷ 


 ★★★★★ আজকের বৈজ্ঞানিক ও কম্পিউটার যুগে এবং গণতাণ্ত্রিক ভারত রাষ্ট্রে সমাজসেবী, ন্যায় পরায়ন, সত্যপন্থী, জাতপাত ধ্বংসকারী,গণতন্ত্রপ্রেমী, দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অনুসারীদের তুলনায় চামচাদের কদর অত্যাধিক বলে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে৷ বর্তমান ভারতের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় রাজনীতিতে সাফল্যলাভ করতে হলে চাই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থন বা ভোট৷ ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য তথা আর্যসন্তানদের দুর্ভাগ্য যে ইতিহাসের সূত্র অনুযায়ী ভারতে তারা বিদেশী৷ এদেশে তাদের জনসংখ্যা মাত্র 15 % , আর আমরা যারা ভারতের আদি অধিবাসী বা মূলনিবাসী জনগণ, জনসংখ্যার বিচারে আমাদের হাতে আছে 85 % ভোটার৷ সেই জন্য ব্রাহ্মণ পরিচালিত কোন দলই পঃ বঙ্গ তথা ভারতের কোথায় ও বিজয়ী হতে পারবেনা৷ অতএব ব্রাহ্মণ্যবাদীরা ভীষণভাবে চিন্তিত এই জন্য যে চামচা না পাওয়া গেলে 15 % উচ্চবর্ণের কি হবে ? তারা তো মাঠে চাষাবাদ করতে পারেনা৷ যদিও জমীদার ও ব্রাহ্মণ সন্তান, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরেজদের স্নেহধন্য, বিদেশী ইংরেজদের প্রশংসায় গান রচনা করে গেয়ে দিলেন " জনগণমন অধিনায়ক জয় হে ভারত ভাগ্যবিধাতা৷ " ফলে যেই ব্রাহ্মণরা গায়ে গতরে খাটতে পারেনা, যারা কায়িক শ্রম করতে পারেনা তারা বিগত 5000 (পাঁচ হাজার বছর) ধরে রাজ্য শাসন করে, মানুষদেরকে শোষণ করে বেশ দুধে ভাতে আছে৷ এখন তাদের চলবে কি করে ? আজকের গণতান্ত্রিক ভারতে তাদের রাজনীতির বংশানুক্রমিক ব্যবসা চালাতে হলে চামচা ছাড়া তারা লোকসভা, বিধানসভা শুধু নয় তারা তো পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বিজয়ী হতে পারবেনা৷ সেই জন্য ঐ বিদেশী আর্য সন্তানদের বা ব্রাহ্মণদের চামচা একান্তই প্রয়োজন৷ 


 ★★ এবারে প্রশ্ন হল চামচা হয় কারা এবং কেন ? চামচা তারাই হতে চায় যারা নিজেদের যোগ্যতা নেই জানা সত্তেও লোভের বশবর্তী হয়ে 15 % উচ্চবর্ণের গোলাম হয়ে, অনুগত হয়ে, বড় বড় পদ অলঙ্কৃত করে৷ নেতৃত্বের গুণাবলী না থাকা সত্তেও যারা বড় বড় পদাধিকারী ব্যক্তি হয়ে, সম্মানিত হতে চাই৷ পদলোভী ও অর্থলোভী হওয়ার কারণে অযোগ্য হয়েও, দায়িত্বহীন হয়েও বড় বড় পদে আসীন হতে যারা ইচ্ছুক হয়৷ তারা বেশ ভাল ভাবেই জানে যে তার মধ্যে তেমন কোন প্রতিভা নেই৷ কিন্তু অবৈধভাবে হলেও তারা সুনাম, যশ ও খ্যাতি একান্তভাবেই পেতে আগ্রহী৷ এই ধরণের লোকেরা নিজ স্বার্থের কারণেই চামচা হতে রাজি হয়ে যায়৷ যারা আত্মমর্যাদা সম্পন্ন নয়, স্বাধীনচেতা নয়, উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন নয়, সমাজদরদী নয়, অথচ ভীষণ লোভী, চরম স্বার্থপর ধরণের জীব তারাই চামচা হতে প্রস্তুত হয়৷ 



 ★★★ চামচা হওয়ার অধিক যোগ্য ব্যক্তিগণ— দেখতে অত্যন্ত সুন্দর, সুঠামদেহী, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন, কূটনীতি বিষয়ে পারদর্শী, সর্ববিষয়ে বাণিজ্যিকিকরণে বিশ্বাসী, লাভ-লোকসান দ্রুত বোঝার ক্ষমতাসম্পন্ন, তার পালনকর্তার মনস্কামনা পূরণে অত্যন্ত আগ্রহী, আত্মসমর্পণে দৃঢ় মনোভাবাপন্ন, নিজ জাতি অথবা নিজ দেশবাসীর তুলনায় ব্যক্তিস্বার্থ বা গেষ্ঠীস্বার্থে আগ্রহী ব্যক্তিগণই চামচা হওয়ার দৌড়ে প্রথম শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত৷ বর্তমান যুগে যোগ্যতার বিচারে চাকুরী লাভ, অর্থ সঞ্চয়, যশ-খ্যাতি লাভের তুলনায় আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিতে প্রস্তুত ব্যক্তিগণ চামচা হওয়ার প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত৷ First Class চামচা হওয়ার আরো একটি ভালো পথ হল— B.A., B.Sc.,B.Com., M.A.,M.Sc.,M.Com., Ph.D., Advocate, Barrister, Engineer, প্রভৃতি উচ্চ ডিগ্রীধারী হতে পারলে State Label, National Label, International Label এর চামচা হওয়া অত্যন্ত সহজ এবং এই লেবেল এর চামচা হতে সক্ষম হলে যশ-খ্যাতি-অর্থ সবই কুক্ষিগত করা সম্ভব৷ তবে স্বাধীন ভারতে লাভজনক ব্যবসা হিসাবে রাজনীতিতে বিশেষ পারদর্শী চামচাদের চাহিদাই স


র্বাধিক৷ কারণ একটিই৷ আর তা হল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সমর্থন লাভ৷ নির্বাচনে বিজয় লাভ ও ক্ষমতা দখল৷ এতে দুই দিকেরই লাভ৷ প্রথম পক্ষ অর্থপ্রদাতা, লালনপালনকারী আর দ্বিতীয় পক্ষ হল চামচা৷ দুজনেরই লাভ, দুজনেরই জয়জয়কার৷ সেই জন্য উচ্চশিক্ষিত মানুষরা আর ঝুঁকি নিতে চায়না৷ তাদের মতে চামচা হওয়াতে সবটাই লাভ, কোন ধরণের লোকসান নেই৷ No risk, no loss, only profit- profit- profit . 


 ★★★★ তবে উচ্চবর্ণের লোকেরা বা ব্রাহ্মণরা জানে যে, এই চামচা হতে প্রস্তুত হয়ে আছে শুধুমাত্র তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি, অনগ্রসর শূদ্র জাতি এবং মুসলমান, খৃষ্টান, শিখ, বৌদ্ধ ও জৈন, সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত Sc, St ,Obc, & Minorities দের উচ্চশিক্ষিত নারী-পুরুষ মূলনিবাসীগণ৷

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)