শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য কী ?

0

          শিক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে  আমাদেরকে অবশ্যই প্রাচীন কাল নিয়ে আলোচনা করতে হবে ৷ ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, প্রাচীনকালে গোটা পৃথিবীর কোথাও  আজকের মত শিক্ষার সুব্যবস্থা ছিলনা ৷ সাধারণ লোকেরা কোন রকম শিক্ষার সুযোগ পেত না ৷ শুধুমাত্র ধনী বা উঁচু তলার লোকেরা অথবা রাজা-বাদশাদের বাড়ীর ছেলেমেয়েরাই লেখাপড়ার সুযোগ পেত ৷ অন্য কেউ পেত না ৷
             আমাদের ভারত ছিল গোটা পৃথিবীর মধ্যে সব থেকে আলাদা ৷ এখানে ব্রাহ্মণদের রাজত্বে  বর্ণব্যবস্থা  বা জাতব্যবস্থা কার্যকর ছিল ৷ বর্ণব্যবস্থায় লেখাপড়ার অর্থাৎ শিক্ষা গ্রহণ করার বা শিক্ষা বিতরণ করবার অধিকার ছিল কেবলমাত্র ব্রাহ্মণদের ৷ শূদ্রদের লেখাপড়া শিখবার বা শেখাবার সুযোগ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আইনগতভাবে নিষিদ্ধ ছিল ৷ শূদ্ররা ধর্মীয় এবং সরকারী নির্দেশ অমান্য করে লেখাপড়া শিখলে বা জ্ঞানের আলোচনা শুনলে তাদের কঠোর শাস্তি হিসাবে জীভ কেটে নেওয়া হত বা সীসা উত্তপ্ত করে গালিয়ে কানে ঢেলে দেওয়া হত ৷  "(( এটা আমাদের এমন একটা দেশ যেখানে জ্ঞান অর্জন করা ও জ্ঞান বিতরণ করা বা জ্ঞান চর্চা করা  কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল ৷    অর্থাৎ মানুষকে অজ্ঞ-মূর্খ করে রাখাই ছিল  শাসক দলের বা ব্রাহ্মণ্য ধর্মের  প্রধান নীতি ৷ )) "
            ইতিহাস থেকে জ্ঞান চর্চার  2 টি সূত্র পাওয়াdd যায় ৷     1, একটি হল—  নবী-রসুল  ও  -পয়গম্বরদের শিক্ষা ৷  আর   2,  য় টি হল—  দার্শনিক, সমাজবিজ্ঞানী,  রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, গবেষক ও সমাজ সংস্কারকদের শিক্ষা ৷
          নবী-রসুল-পয়গম্বরদের নিকট থেকে মানবজাতি যে শিক্ষা লাভ করেছে সেই শিক্ষা আল্লাহর পক্ষ থেকে ফেরেশতাদের মাধ্যমে আমাদের নিকট এসেছে ৷ সমস্ত নবী, রসুল, পয়গম্বররা সমস্ত স্তরের মানুষদের নিকট আল্লাহ প্রেরিত ওহীর জ্ঞান বিতরণ করেছেন বহু বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে এবং সকল মানুষকে শিক্ষিত, সচেতন, চরিত্রবান ও যোগ্য করে গড়ে তোলার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন ৷ নবীদের শিক্ষা ছিল আল্লাহ প্রেরিত ৷ তাই ওহীর জ্ঞান হল খাঁটি,  বিশুদ্ধ  ও   নির্ভেজাল ৷
        
              আর দার্শনিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজ বিজ্ঞানী, গবেষক ও সমাজ সংস্কারকরা তাঁদের সারা জীবনব্যাপী অক্লান্ত পরিশ্রম করে , ইতিহাসের সূত্র ধরে যে মানবীয় অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান অর্জন করেছেন এবং ঐ জ্ঞানকে পৃথিবীর সকল মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়ার প্রাণপন চেষ্টা সাধনা চালিয়েছেন তাঁরাও মানব সমাজের নিকট শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব ৷ তবে ঐ জ্ঞান মানবীয় ত্রুটি বিচ্যুতির ঊর্ধে নয় ৷
               মানব জাতির উন্নয়ণ ও কল্যাণে   শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ৷ দুনিযায় যে যুগেই হোকd আর যে দেশেই হোক  সর্বত্রই শিক্ষা মানুষকে পথ  প্রদর্শন করেছে ৷ শিক্ষা যেখানেই সমাদৃত হয়েছে  উন্নয়ণ সেখানে  দ্রুততর ও দৃঢ়তর হয়েছে ৷  তা নবী-রসুলদের শিক্ষার মাধ্যমেই হোক বা দার্শনিক ও সমাজ বিজ্ঞানীদের শিক্ষার  মাধ্যমেই হোক ৷
              শিক্ষা জিনিসটা আসলে কী  ? এবং শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য কী  ?  এ সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত পণ্ডিতদের মতে কে কী বলেন দেখা যাক —
     অ্যারিষ্টটলের মতে - " সুস্থ দেহে সুস্থ মনের সৃষ্টিই হল শিক্ষা ৷ এটি মানুষের মধ্যে এমন এক সত্তার আবির্ভাব ঘটায় যার দ্বারা মানুষ শাশ্বত সত্য,  মহত্ব এবং সুন্দরের আরাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করতে সমর্থ হয ৷ "   দার্শনিক রুশোর মতে — শিক্ষার উদ্দেশ্য হল - " সমাজের সমস্ত কৃত্রিমতা বর্জন করে,  একটি স্বাভাবিক মানুষ তৈরীতে সাহায্য করা ৷ "
              UNESCO প্রেরিত কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে—  "শিক্ষার উদ্দেশ্য   4 টি ৷   
1, জানার জন্য শিক্ষা ৷  
2,  কর্মের জন্য শিক্ষা ৷   
3,  একত্রে বাঁচার জন্য শিক্ষা ৷ 
4,  প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষা ৷ "  
এ ছাড়া আরো বহু পণ্ডিত ও বুদ্ধিজীবী আছেন তাঁরা বলেছেন— "শিক্ষা মানবজাতির মেরুদণ্ড ৷"  "শিক্ষা মানুষের জন্মগত অধিকার ৷"    " শিক্ষা মানুষের শোষণ মুক্তির একমাত্র হাতিয়ার ৷"   হজরত মুহাম্মদ (স:) বলেছেন—    "প্রতিটি মুসলমান সে পুরুষ হোক বা নারীই হোক সকলের জন্য  (ইলম্-জ্ঞান-শিক্ষা ) অর্জন করা ফরজ অর্থাৎ অপরিহার্য ৷" 
               উপরে সংক্ষেপে যে কথা আলোচনা করা হয়েছে তার মাধ্যমে একথা পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে যে— "শিক্ষা ব্যতীত মানুষ তার নিজের স্বরূপ জানতে পারেনা, নিজের অভ্যন্তরে নিহিত শক্তি অনুধাবন করতে পারেনা ৷ শিক্ষা অর্জন না করলে মানুষ নিজের দেশ,  নিজের সমাজ,  নিজের পরিবেশ - পরিস্থিতি, ধর্ম, সভ্যতা,  ন্যায়নীতি, রাজনীতি, সততা,   আত্মসম্মান,   অধিকার, দায়িত্ব-কর্তব্য, স্বাধীনতা,  ক্ষমতা, আইন-কানুন, অর্থ,  ব্যবসা-বাণিজ্য,  ন্যায়- অন্যায়,  ভোটাধিকার প্রয়োগ,  সঠিক-বেঠিক , জায়েজ-নাজায়েজ,  হিত-গর্হিত কোন কিছুই মূল্যায়ণ বা বিশ্লেষণ করতে পারেনা ৷ শিক্ষা ব্যতীত মানুষ মনুষ্যত্য  লাভ করতে পারেনা ৷
    
               আমাদের দেশে বর্তমানে যে সকলের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা রযেছে তার ইতিহাস খুব বেশী দিনের নয় ৷ ভারতে মুসলমান রাজত্বকালে লেখাপড়ার মাধ্যম ছিল মাদ্রাসা শিক্ষা ৷ মুসলমান হোক বা অমুসলমান হোক যে শিক্ষা গ্রহণ করতে চায় তার জন্য মাদ্রাসার দ্বার ছিল সর্বদা অবারিত ৷ প্রমাণ স্বরূপ - ব্রাহ্মণ সন্তান  রামমোহন রায় পাটনার এক মুসলমান পরিচালিত মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে উর্দূ,  ফারসী ও আরবী ভাষায় জ্ঞান অর্জন করেছিলেন কারণ তখন রাষ্ট্রীয় ভাষা ছিল ফারসী ৷
         পরিশেষে বলি—  বর্তমান ভারতে ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্যরা বা  উচ্চবর্ণের লোকেরা প্রায় সকলেই শিক্ষিত ৷ তাদের মহিলারাও শিক্ষিতা ৷ তফসিলী জাতি, তফসিলী উপজাতি ও অনগ্রসর জাতির  অধিকাংশ লোকেরা এবং তাদের মহিলারাও শিক্ষায়  অগ্রসর হয়েছে ৷ মুসলমানরা এখনও শিক্ষার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেনি ৷ মুসলমানদের পুরুষরাই শিক্ষা অর্জনে পশ্চাদপদ আর মুসলিম মহিলারা তো এখনও  প্রতিযোগিতার man  অবস্থান করছে ৷ খৃষ্টান, শিখ, বৌদ্ধ ও  জৈনরা  সকলেই শিক্ষার ব্যপারে মুসলমানদের তুলনায় অনেক অগ্রসর ৷ তাহলে মুসলমানরা শিক্ষায় পেছিয়ে থাকবে  কেন  ?  যেই মুসলমানরা এককালে গোটা পৃথিবীকে সভ্যতার পাঠ পড়িয়েছে,  কয়েক শতাব্দী ধরে ভারতে রাজত্ব করেছে, আজ তারা সর্ব বিষয়ে লাঞ্ছিত, বঞ্চিত ও অপমানিত ৷ এখন ভারতে  মুসলমানরা হল সর্বহারা ৷
((( এ থেকে মুক্তির পথ একটাই ৷ তা হল শিক্ষা- শিক্ষা- আর শিক্ষা ৷ )))
          —  খোদা  হাফিজ —

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)