আজ সকলেই বলছে যে দেশের সামনে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হল সন্ত্রাসবাদ৷ আমার মতে একথা সঠিক নয়৷ দেশের সামনে সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হল ব্রাহ্মণ্যবাদ৷
ব্রাহ্মণ্যবাদ কাকে বলে ? এবং কেন বলে ? ব্রাহ্মণ্যবাদ হল এমন একটি মতবাদ এবং সমাজব্যবস্থা যার দ্বারা গোটা সমাজ নিয়ণ্ত্রিত হয় এবং মানব সমাজে ব্রাহ্মণদেরই স্বার্থ প্রতিষ্ঠা হয়৷ ব্রাহ্মণদের নেতৃত্ব, ব্রাহ্মণদের স্বার্থ, ব্রাহ্মণদের বুদ্ধী, ব্রাহ্মণদের পরিকল্পনা সবকিছুই প্রতিষ্ঠা করাকে ব্রাহ্মণ্যবাদ বলে৷ যে মতবাদকে ব্রাহ্মণরা তৈরী করেছে, ব্রাহ্মণরা পরিশ্রম করে বাঁচিয়ে রেখেছে, ব্রাহ্মণরা পরিচালনা করছে এবং ব্রাহ্মণরাই লাভবান হচ্ছে সেই মতবাদকে ব্রাহ্মণ্যবাদ বলা হয়৷
ডঃ আম্বেদকর ব্রাহ্মণ্যবাদ সম্পর্কে যেভাবে বর্ণনা করে গেছেন তা হল এই যে— ব্রাহ্মণরা বিদেশী, ব্রাহ্মণদের ধর্ম বা মতবাদটি হল অসাম্য, বিভেদ ও শোষণের হাতিয়ার৷ তাদের ধর্ম মানুষকে বহু বর্ণে ও বহু জাতে বিভক্ত করে মানুষকে পশুর পর্যায়ে নামিয়ে দিয়েছে৷ ঐ ব্রাহ্মণদের দেবতাদের হাতেও অস্ত্রসম্ভার৷ তারা জাত-পাতের নামে মানুষদেরকে হীন ও নীচ হিসাবে ঘোষণা করেছে৷ তারা কয়েক হাজার বছর ধরে ধর্মের নামে মানুষদেরকে অসহায়, পঙ্গু, পরাধীন ও পরনির্ভরশীল করে কোটি-কোটি মানুষকে গোলাম, ক্রীতদাস বানিয়ে use & throw করে চলেছে৷
বাবাসাহেব ডঃ আম্বেদকর বলেছেন— " ব্রাহ্মণ্যবাদ একটি শোষণের হাতিয়ার৷ "
বামসেফের সর্বভারতীয় সভাপতি মাননীয় ওয়ামান মেশরাম সাহেব বলেছেন— " सभी समस्यायों का मूल कारण ब्राह्मणवाद है। " অর্থাৎ ভারতে যত সমস্যা আছে , সব সমস্যার মূল কারণ হল ব্রাহ্মণ্যবাদ৷
পশ্চিম বাংলায় আম্বেদকর সাহিত্যের লেখক ও প্রচারক প্রয়াত রণজিত কুমার সিকদার বলেছেন— " ধর্মীয় কলাকৌশলে সামাজিক কাঠামোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক শোষণের এক অভিনব পরিকল্পনার নাম হল ব্রাহ্মণ্যবাদ৷ "
ব্রাহ্মণ্যবাদ সম্পর্কে এতক্ষণ ধরে যা যা বললাম সেই সমস্ত কথাকে ইতিহাসের আলোকে আমরা যদি মেলাতে চাই তাহলে দেখতে পাব যে, ভারত বিখ্যাত বা বিশ্ববিখ্যাত পণ্ডিতরা যা যা বলে গেছেন তাদের সব কথাগুলোই সর্বাংশে সত্য৷
ইতিহাসে পাওয়া যায় যে, অতীতে ঐ ব্রাহ্মণ্যবাদীরা সিডিউল্ড কাষ্টদের সঙ্গে, সিডিউল্ড ট্রাইবদের সঙ্গে এবং ওবিসি বা অনগ্রসর শূদ্রদের সঙ্গে যেভাবে অসাম্য, বৈষম্য , শোষণ ও হিংসামূলক ব্যবহার করেছে পৃথ্বীর ইতিহাসে তা তুলনাহীন৷
ব্রাহ্মণ্যবাদ স্ববিরোধিতায় পূর্ণ৷ ব্রাহ্মণ্যবাদীরা জোর গলায় বলে—
(1) ভারত শান্তির দেশ অথচ সবথেকে বেশী অশান্তি ভারতেই৷
(2) ব্রাহ্মণ্য ধর্মে, মনুস্মৃতি অনুসারে— নারী মাত্রেই শূদ্রাণী৷ আবার তাদের যত দেব-দেবী আছে তাদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ নারী দেবতা৷
(3) তারা বলে, আমরা অহিংসায় বিশ্বাসী৷ কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় পৃথিবীর মধ্যে ভারতেই হিংসা সর্বাধিক৷
(4) তারা বলে, গৌতম বুদ্ধ ভারতের গর্ব এবং তারা এখন গৌতম বুদ্ধকে বিষ্ণুর দশম অবতার বানিয়েছে৷ অথচ ইতিহাস বলছে ভারত থেকে বৌদ্ধ ধর্মকে এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরকে হত্যা করে, আগুনে পুড়িয়ে ভারতকে বৌদ্ধশূন্য করেছে ব্রাহ্মণরাই৷
(5) ঐ শাসক শ্রেণী দু-একজন মুসলমান চামচা বিদেশ প্রতিমণ্ত্রী করে রাখে হাতির বাইরের দাঁতের মত শধুমাত্র প্রদর্শনের জন্য৷ আর ঐ চামচা মণ্ত্রীরা মুসলিম দেশগুলোতে গিয়ে বলে ভারতের মুসলমানরা শান্তিতে আছে৷ প্রকৃত অবস্থা অল্লাহই জানেন৷ ( লোকে বলে, কবরের হাল মুর্দাই জানে )৷ বর্তমান পৃথিবীর কোন দেশে জন্মগত জাত-পাত নেই৷ ভারতের মত এত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নেই, এত অশিক্ষিত মূর্খ নেই৷ এ সবই ব্রাহ্মণ্যবাদের মহিমা৷ পণ্ডিতরা বলেন, ব্রাহ্মণ্যবাদের হেঁয়ালী নাকী দেবতারাও বুঝে উঠতে পারেন না৷ তবে আমরা বুঝবো কি করে ? আর ভাই জাকির নায়েক সাহেবও বুঝবেন কি করে ?
উপরোক্ত ইতিহাসকে সামনে রেখে আমরা যদি বর্তমান ভারতের চলমান বা ঘটমান অবস্থার মূল্যায়ণ করি তাহলে বুঝতে পারব যে— ডঃ জাকির নায়েক ভারতের আইন-কানুন মেনে, কোরআন-হাদীসের অগাধ জ্ঞান অর্জন করে, কোরআন ও হাদীসের আরবী কোটেশান ব্যবহার করে ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুক্তি, তথ্য, প্রমাণ, ইতিহাস ও মজহাবী কোন্দল ব্যতীত যেভাবে তিনি ইসলামের প্রচার করে চলেছেন তাতে ধর্মব্যবসায়ী মৌলুবী — মওলানা সাহেবগণ ও ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা সন্তুষ্ট হওয়ার কথা নয়৷ তাই তারা তাদের কায়েমী স্বার্থ বজায় রাখার জন্য ডঃ জাকির নায়েককে বলির পাঁঠা বানিয়েছে৷
আমার ধারণা ডঃ জাকির নায়েক যদি তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে সঠিক নির্দোষিতার প্রমাণ দিতে পারেন তাহলে ভারতের আদালতে তিনি সুবিচার পাবেন এবং " তিনি সন্ত্রাসবাদে উস্কানীদাতা " বলে যারা অপপ্রচার করছে তারা অচিরেই পশ্চাদাপসরণ করবে৷ এবং ডঃ নায়েক সসম্মানে তাঁর কর্তব্য কর্ম করে যেতে পারবেন আরো সতর্কভাবে, আরো সুন্দরভাবে৷
তবে আরো একটি কথা হল এই যে, মহাপণ্ডিত ডঃ জাকির নায়েক ব্রাহ্মণ্যবাদ সম্পর্কে কেন সতর্ক ছিলেন না এবং তাঁর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায়ই ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের দর্শন পাওয়া যেত কেন ? তাঁর এই ব্রাহ্মণ প্রীতিতে আমি কিছুটা বিব্রত বোধ করি৷ আশাকরি তিনি সতর্কতা অবলম্বন করবেন৷
সর্বশেষে আমি ডঃ জাকির নায়েকের ভক্তদের নিকট থেকে জানতে চাই যে, ডঃ নায়েক কি কখনো দলিত নেতা, শূদ্র নেতাদেরকে, শ্রদ্ধেয় ভি টি রাজশেকর, ওয়ামান মেশরামজীর মত বিশ্ববিখ্যত বুদ্ধিজীবীদেরকে আহ্বান করেছেন ? যদি করে থাকেন তাহলে অবশ্যই জানাবেন, আমি কৃতার্থ হব৷
অতএব এটা প্রমাণিত সত্য যে, ভারতের জনগণের সামনে সন্ত্রাসবাদ অধিক বিপজ্জনক নয় বরং সর্বাধিক বিপজ্জক মতবাদ হচ্ছে ব্রাহ্মণ্যবাদ৷ Brahmanism .
সুন্দর লিখেছেন ❤️
ReplyDelete