ভারতে মূলনিবাসী, BAMCEF-এর আন্দোলন, ব্রাহ্মণ্যবাদ, সংবিধান ও মুসলমান।

0

★   ভারতে বামসেফ (BAMCEF) সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল—    ভারতের সংবিধানে বর্ণিত সাম্য, মৈত্রী, ন্যায় ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা৷ সেই সঙ্গে
5000 বছরের পুরোনো ও জটিল (chronic diseases) লক্ষণযুক্ত কঠিন রোগরূপী সমস্যাগুলোকে এবং ষড়যণ্ত্রগুলোকে জাতীয় বিষয় (National issue) হিসাবে গোটা ভারতবাসীর সামনে উত্থাপন করা৷ তারপর ভারতের সংবিধানেের মধ্যে ঐ সমস্ত সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে বের করা৷ ঐ সমস্ত জটিল বিষয়গুলো হল—  (1)  বর্তমান ভারত একটি স্বাধীন দেশ হওয়া সত্তেও, দেশে গণতণ্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও, ভারতের জনগণ ভারতের সংবিধানের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস রাখার পরেও দেশবাসীর বৃহত্তর জনগণের কল্যাণ, উন্নতি, প্রগতি হল না কেন ? (2) ভারতের  স্বাধীনতার 70 বছর পরেও দেশের অর্ধেক মানুষ অশিক্ষিত কেন ? অক্ষরজ্ঞান হলে স্বাক্ষর বলা যায় কিন্তু স্বাক্ষর আর শিক্ষিত এক নয়৷ (3) ভারত সম্পদশালী দেশ হওয়া সত্তেও ভারতের অর্ধেক মানুষ দরিদ্র বা দারিদ্র সীমার নীচে কাঙাল অবস্থায়  অবস্থান করছে কেন ? (4) তফসিলি জাতি Sc, তফসিলি উপজাতি St, এবং অন্যান্য অনগ্রসর শূদ্র জাতি Obc, তাদের ন্যায্য অধিকার পায়নি কেন ? (5) তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি ও অনগ্রসর শূদ্র জাতির লোকেরা ধর্মে হিন্দু হওয়া সত্তেও তাদের সঙ্গে উচ্চবর্ণের হিন্দু ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যরা বিমাতৃসুলভ আচরণ করে থাকে কেন ? (6) তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি ও অনগ্রসর শূদ্র জাতির জন্য ভারতের সংবিধানে শিক্ষা, চাকুরীতে সংরক্ষণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কথা লিপিবদ্ধ থাকা সত্তেও তাদের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করে রেখেছে কে এবং কারা ? (7)  ভারতের সংবিধানে সব ধর্মের লোকদের জন্য 6 টি অধিকারকে মৌলিক অধিকার বলে লিপিবদ্ধ করা সত্তেও মুসলমান, খৃষ্টান, শিখ ও বৌদ্ধদের সঙ্গে সরকার  বিমাতৃসুলভ আচরণ ও বঞ্চনা করে চলেছে কেন ? (8) সংবিধানে সব ধর্মের লোকদের জন্য শিক্ষা, চাকুরী, মান-সম্মান, সুযোগ-সুবিধার সুব্যবস্থা নিশ্চিত  থাকা সত্তেও ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্যদের তুলনায় মুসলমান, খৃস্টান, শিখ, বৌদ্ধরা বঞ্চনা, নির্যাতন, হিংসার শিকার হচ্ছে কেন ? (9) বহির্ভারতে আমাদের ভারত গরীব, দুস্থ, অসহায়, অশিক্ষিত, পরনির্ভরশীল, করুণার পাত্র, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বিধ্বস্ত, জাতপাতে দীর্ণ এরকম একটি অপমানজনক পরিচয়ে পরিচিত হয়ে রয়েছে কেন ? (10) আমরা দেশবাসী হিসাবে স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি যে উচ্চবর্ণের 15 % ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্য ব্যতীত অন্য  কোন মানুষকে নাগরিক হিসাবে সম্মান, মর্যাদা, অধিকার, ক্ষমতা লাভ করতে দেওয়া হয়নি, এর পেছনে আছে কারা ? (11) স্বাধীন ভারতের সংবিধানকে এড়িয়ে মনুস্মৃতিকে প্রতিষ্ঠা করে দিবালোকে  গোটা দেশবাসীর চোখে ধুলো দিয়ে সুকৌশলে ব্রাহ্মণ্যরাজ কায়েম করে রেখেছে কারা ? তাদের উদ্দেশ্য কি ? এ কথা দেশবাসীর অবশ্যই জানার অধিকার আছে৷

       ★★★    উপরোক্ত জটিল রোগ (chronic disease) টির গুপ্ত নাম হল ব্রাহ্মণ্যবাদ (Brahminism) ৷ এর প্রকাশ্য নাম হল হিন্দুধর্ম৷ Hinduism is Brahminism.  এই ব্রাহ্মণ্যবাদের  অপর নাম মনুবাদ, বর্ণবাদ, শয়তানীবাদ, জহরবাদ, কঠোরবাদ প্রভৃতি৷ এই মনুবাদ বা ব্রাহ্মণ্যবাদ হল মানবতা বিধ্বংসী বিষাক্ত মতবাদ৷ এই মনু নিজের মেয়েকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করেছিল৷ আর এক মাতৃহন্তা পরশুরাম এবং ঐ মনু এরা হল  ব্রাহ্মণ্যবাদীদের আদর্শ পুরুষ৷ আধুনিক কালের কুখ্যাত হিটলারও তাদের নিকট শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি৷ পুরুষ আর মহিলারা ভদ্রভাবে গায়ে মাথায় কাপড়-চোপড় পরলে ওরা ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়৷ ওদের দৃষ্টিতে আদর্শ ও পবিত্র ভদ্রলোক হল নেংটা সাধু৷ যেই সাধু যত বেশী দিন স্নান করেনি, যত বেশী দিন শরীরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেনি, যত বেশী দিন অসভ্য, নোংরা, অপবিত্রভাবে জীবন যাপন করেছে, সেই সাধু তত বেশী শুধু আদর্শ পুরুষই নয় বরং তারাই হল বিশ্বশ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ৷ যেমন অর্ধ উলঙ্গ নেতা মিঃ গান্ধীজি, ভগবান রজনীশ ও বাবা রামদেব৷ ঐ ধরণের নেতারাই মনুবাদী সমাজে বেশী জনপ্রিয়৷ এই তো কয়েকদিন পূর্বে হরিয়ানা বিধানসভার মধ্যে দিগম্বরী জৈন মুনী তরুন সাগর বিনা পোষাকেই বিধানসভা ভবনে প্রবেশ করে সম্মানীয় বিধায়কদেরকে উপদেশ ও বাণী (?) বিতরণ করে গেলেন৷ যেই ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণ্যবাদীরা উপরোক্ত মানসিকতা সম্পন্ন তাদের উপর আমরা 125 কোটি  ভারতবাসী ভরসা রেখেছি৷ আমরা কত অযোগ্য !!!!!!!!! ? কত অপদার্থ !!!!!!!!!!!! ?   তাই আমরা কোন সুফল লাভ করতে পারিনি৷ এটা ভাগ্যের দোষ নয় বরং এটা আমাদের অযোগ্য পথ প্রদর্শক বুদ্ধিজীবীদের দোষ৷ 1950 সালে 26 শে জানুয়ারী স্বাধীন ভারতের সংবিধান কার্যকর হওয়ার প্রাক্কালে ভারতের সংবিধান প্রণেতা ডঃ আম্বেদকর সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছিলেন এই বলে যে, " হে ভারতবাসী শোন৷ পৃথিবীর কোন দেশের কেবলমাত্র সংবিধান উন্নত হলেই সেই দেশের নাগরিকদের কল্যাণ ও উন্নতি হবে না৷ উন্নতির জন্য শর্ত হল সেই দেশের শাসকদেরকে ভালো মানুষ এবং আন্তরিক হতে হবে৷ অপরপক্ষে কোন দেশের সংবিধান ভালো না হলেও ভালো শাসক হলে সেই দেশের মানুষদের উন্নতি হওয়া সম্ভব৷ "

      ★★★★   স্বাধীন ভারতে ব্রাহ্মণ্যবাদকে চিনতে পেরেছিলেন একমাত্র চক্ষুস্মান ব্যক্তি বাবাসাহেব ডঃ  আম্বেদকর৷ তাঁরপর কাঁশীরামজী, তাঁরপর ওয়ামন মেশরামজী৷ ডঃ আম্বেদকর  ব্রাহ্মণদেরকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন বলেই তিনি নিজে  ব্রাহ্মণদেরকে বিশ্বাস করতেন না এবং তিনি তাঁর জাতির লোকদেরকে লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়ে গেছেন যে,  ব্রাহ্মণ বিশ্বাসের অযোগ্য৷ সেই দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী বামসেফ আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে৷ ভারতে একটাই দল আছে যে দলে  ব্রাহ্মণদের প্রবেশাধিকার নেই৷ ভারতে 100 % ব্রাহ্মণ বর্জিত দল হল বামসেফ (BAMCEF) আন্দোলন৷ মওলানা মুহাম্মদ আলি বুঝতে পেরে কংগ্রেস ত্যাগ করেছিলেন৷ মওলানা আবুল কালাম আজাদ থেকে গোলাম নবী আজাদ হয়ে  মওলানা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী পর্যন্ত  ব্রাহ্মণ্যবাদকে চিনতে পারলেন না শুধুমাত্র ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে৷   বর্তমানে বাংলার মুসলমান বুদ্ধিজীবীরা  ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অজ্ঞতার কারণে এবং ব্যক্তিগত স্বার্থে  ব্রাহ্মণ, ব্রাহ্মণ্যবাদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজনৈতিক দলগুলোকে চিনতে না পেরে কখনও কংগ্রেস, কখনও সিপিএম, কখনও তৃণমূল কংগ্রেস প্রভৃতি দলগুলোর পশ্চাতে পশ্চাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে উন্নতির আশা নিয়ে৷ ইতিহাস বলছে, এ আশা পূরণ হবে না৷ কারণ ঐ সমস্ত দলগুলো ব্রাহ্মণ্যবাদী দল৷ ব্রাহ্মণ আর মুসলমান কখনও ঐক্য হবেনা৷ কারণ ব্রাহ্মণরা বিদেশী আর মুসলমানরা মূলনিবাসী৷ মুসলমানদের রক্তের ভাই (blood brother) মূলনিবাসী শূদ্র সমাজ৷ যারা Sc, St, Obc নামে পরিচিত৷ Sc, St, Obc রাও মূলনিবাসী আর মুসলমানরা ও মূলনিবাসী৷ " মূলনিবাসী মূলনিবাসী ভাই ভাই৷ এদের ঐক্য ছাড়া উভয়ের গতি নাই৷ "
★   অতএব জয় মূলনিবাসী৷  ★

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)