বর্তমান ভারতের একমাত্র আলোর দিশারী - মূলনিবাসী আন্দোলন

1
★    বর্তমান ভারতে একটি নতুন ধরণের আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেই আন্দোলনের নাম হল মূলনিবাসী আন্দোলন৷ 

প্রশ্ন হল : মূলনিবাসী কারা ?


 মূলনিবাসী তাদেরকে বলা হয় যারা প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ভারতে বসবাস করে আসছে, তারাই হল ভারতের  মূলনিবাসী জনগণ৷ তাদের বর্তমান পরিচয় হল— তফসিলি জাতি (Sc), তফসিলি উপজাতি (St), অনগ্রসর শূদ্র জাতি (Obc) এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু ( Minorities)  যথা- মুসলমান, খৃষ্টান, শিখ, বৌদ্ধ ও জৈন প্রভৃতি জাতিসমূহ৷ প্রাচীন কালে এরাই ছিল মূলভারতীয়৷ তাই এরা মূলনিবাসী৷ আর মূলনিবাসী নয় কারা ? মূলনিবসী তারা নয়, যারা পরবর্তীকালে বিদেশ থেকে ভারতে এসেছে৷ যেমন আর্যরা (Aryan) বিদেশী৷ আর্যরা বিদেশ থেকে এসে ভারতের উপর আক্রমণ করে, ভারত দখল করে, তাদের ধর্ম, তাদের সংস্কৃতি ভারতবাসীর উপর চাপিয়ে দিয়ে ভারতের মূলনিবাসী জনগণকে শূদ্র, অস্পৃশ্য, দাস, দস্যু, রাক্ষস, ছোটজাত, গোলাম, Slaves বানিয়ে রেখেছে প্রায় 5000 (পাঁচ হাজার)  বছর ধরে৷


          ★     উপরের আলোচনা থেকে জানা গেল যে, আর্যরা বা আর্য বংশোদ্ভূত ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যরা বিদেশী আর অনার্য, অসূর, অস্পৃশ্য ও শূদ্র এবং আদিবাসী সমাজের লোকেরা সকলেই  মূলনিবাসী৷ ধর্মীয় সংখ্যালঘু সমাজের মধ্যে মুসলমান, খৃষ্টান, শিখ, বৌদ্ধ ও জৈনরা ও মূলনিবাসী৷ কারণ ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের ফলে যুগে যুগে মূলনিবাসী সমাজের বহু মানুষ কখনও বৌদ্ধ হয়েছে, জৈন হয়েছে, মুসলমান হয়েছে এবং খৃষ্টান হয়েছে৷ ফলে এরা সকলেই মূলনিবাসী৷ বর্তমানে মূলনিবাসী সমাজের জনসংখ্যা হল শতকরা 85 % , আর বিদেশী আর্যদের জনসংখ্যা হল মাত্র 15 %  ৷



       ★★    আমাদের আলোচ্য বিষয় হল, স্বাধীন ভারতে পরাধীন মূলনিবাসী৷ শুনতে অবাক লাগলেও ব্যপারটি গবেষণা যোগ্য৷ সেই 70 বছর পূর্বে বিদেশী ইংরেজরা ভারত থেকে বিদায় নিয়েছে৷ এবং 15 ই আগষ্ট 1947 সালে আমাদের ভারত স্বাধীন হয়েছে৷ কিন্তু আশ্চর্যের ব্যপার হল এক বিদেশী ইংরেজরা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আর এক বিদেশী আর্য সন্তান ব্রাহ্মণরা ভারতের রাজ ক্ষমতা দখল করে বেনামে বা গণতণ্ত্রের নামে ব্রাহ্মণ রাজত্ব কায়েম করে ফেলেছে৷ ফলে মূলনিবাসী শূদ্র, অস্পৃশ্য, আদিবাসী এবং মুসলমান, খৃষ্টান, শিখ, বৌদ্ধ ও জৈনরা স্বাধীন ভারতে পরাধীন হয়ে পড়েছে৷ এই বিষয়টি সঠিক এবং পরিষ্কারভাবে ইতিহাস থেকে প্রমাণিত এবং DNA পরীক্ষায় ও প্রমাণিত সত্য৷ সরকারী, স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটির ইতিহাস অধ্যায়ে ব্যাপকভাবে ও বিস্তারিতভাবে বিষয়টি বহু চর্চিত৷ এই বিষয়টি দেশের সমস্ত উচ্চ শিক্ষিত B.A., B.Sc., B.Com., M.A., M.Sc., M.Com, রা সকলেই জানে৷ তা সত্তেও সকলেই নিরব৷ কে বলবে যে,    " রাজা তোর কাপড় কোথায় ? " এই হল আমাদের উচ্চ শিক্ষিত মানুষদের অবস্থা৷



        ★★★  1947 থেকে ভারতে  স্বাধীনতার নামে যে টুকু ক্ষমতা এসেছে তার সবটাই " নেপোয় মারে দৈ " এর মত দেশের সমস্ত সুযেগ-সুবিধা ও সম্পদ বিদেশী আর্য বংশোদ্ভূত ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যরা কব্জা করে ফেলেছে৷ দেশে যত রাজনৈতিক দল আছে তাদের সবগুলোই ব্রাহ্মণদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত৷ সমস্ত পার্টীর হাই কমাণ্ড ব্রাহ্মণরা৷ সমস্ত পার্টীর রাজ্য কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটি, ওয়ার্কিং কমিটি, পলিট ব্যুরো সব জায়গায় নেতৃত্ব করছে ব্রাহ্মণরা৷ BDO, SDO, DM, বিভিন্ন মণ্ত্রীদের সচিব, IAS, IPS, মুখ্যমণ্ত্রীদের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চান্সেলার, পত্র-পত্রিকার এডিটর, সাংবাদিক, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর, হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের জজ সাহেবরা, বিদেশে রাষ্ট্রদূত, প্রধানমণ্ত্রী, রাষ্ট্রপতিসহ সমস্ত পদস্থ ও উচ্চপদস্থ পদে আসীন হয়ে আছে ব্রাহ্মণরা৷ এদেশে শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ সন্তানরাই ভদ্রলোক হিসাবে পরিচিত হয়৷ সরকারীভাবে প্রকাশিত মণ্ডল কমিশনের রিপোর্টে জানা গেছে যে, দেশের মোট রাজনীতির 66%, চাকুরীর 87%, জমি-জায়গার 92%, পুঁজি বা ব্যবসায় 94% সম্পদ দখল করেছে 15% উচ্চবর্ণের বিদেশী আর্য সন্তানরা৷



        ★★★★   স্বাধীন ভারতে পরাধীন মূলনিবাসী জনগণের অর্থ হল— Sc, St, Obc & minorities তথা 85% মূলনিবাসী জনগণ রাজনীতিতে মাত্র,  34%, চাকুরীতে 13%, জমি-জায়গার 8% আর ব্যবসায় 6% সম্পদ দখল করতে পেরেছে৷ তাহলে আমরা আমাদের ভারতকে স্বাধীন দেশ বলব কি করে ? যদি আমাদের দেশ স্বাধীন হয় তাহলে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এবং মূলনিবাসী জনগণ সম্পদের য়থোপযুক্ত অংশ পাইনি কেন ? কেন আমরা নিজদেশে পরবাসী হয়ে আছি ? এর জন্য দায়ী কে বা কারা ? আমরা কাদেরকে ভোট দিই ? কি উদ্দেশ্যে ভোট দিই ? যারা আমাদের ভোট নেয় তারা কারা ? তাদের সঠিক পরিচয় কি কি ? আমাদের সম্পর্কে তাদের ধারণা কি ? কেন আমাদের ভালো ঘর বাড়ী নেই ? গাড়ী নেই ? জমি-জায়গা-মান-সম্মান-ক্ষমতা কোন কিছুই নেই কেন ? যেই আর্য সন্তানরা 5000 বছর ধরে আমাদের উপর এইভাবে শোষণ, পীড়ন ও অমানবিক, অনৈতিক, সংবিধান বিরোধী কার্যকলাপ ও অন্যায়, অবিচার  চালিয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে আমরা ক্ষমা করব কেন ? আমাদের জীবন যাপনের মান পরাধীন ও ক্রীতদাসদের মত অত্যন্ত নিম্নমানের,  কেন ?  আর বিদেশীরা আছে রাজার হালে৷ তাদের জীবন যাপনের মান এবং তাদের সন্তানদের পডাশুনা, তাদের ঘর বাড়ী, তাদের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, তাদের খাওয়া-দাওয়া, তাদের ভ্রমণ, তাদের ঠাটবাট ও  বিলাসিতাপূর্ণ ও ব্যয়বহুল জীবন যাপন পদ্ধতি প্রভৃতি সব কিছু দেখে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে তারা স্বাধীন ভারতের  নাগরিক৷ আর তাদের  পাশাপাশি আমাদের জীবন যাপনের মান তুলনা করলে জানা যায় যে আমরা ভারতের মূলনিবাসীরা পরাধীনভাবে জীবন-যাপন করছি৷ এই বল স্বাধীন ভারতে পরাধীন মূলনিবাসী৷



       ★★★★★    এখন আলোচনা করব যে মূলনিবাসী আন্দোলনটা কি ? মূলনিবাসী আন্দোলন হল ভারতের মূলনিবাসী সমাজের উন্নতির জন্য একটি সর্বভারতীয় গণআন্দোলন৷ এই আন্দোলনটি শুরু করেছে বামসেফ (BAMCEF) নামে একটি সর্বভারতীয় অ-রাজনৈতিক সংগঠন৷ এই সংগঠনটি ডঃ আম্বেদকরের আদর্শ ও চিন্তাধারা এবং ভারতের সংবিধান প্রতিষ্ঠা করতে চাই৷ ভারতের মূলনিবাসী সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ণ ও কল্যাণের লক্ষ্যে ন্যায়, সাম্য ও স্বাধীনতা কায়েম করতে সক্রিয় রয়েছে এই সংগঠন৷ স্বাধীন ভারতে পরাধীন মূলনিবাসী জনগণের নেতৃত্ব ও রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করার মহান দায়িত্ব পালন করার কাজে সকল মূলনিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া একান্ত প্রয়োজন৷

Post a Comment

1Comments
Post a Comment