মানব জাতির ইতিহাস অধ্যায়ন করলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ও বিভিন্ন জাতির উত্থান পতনের ইতিহাস জানা যায়৷ ভারতে গৌতম বুদ্ধের আন্দোলন, আরব দেশে হজরত মুহাম্মদ (সঃ) এর আন্দোলন, গ্রীক সভ্যতা এবং রোমান সাম্রাজ্যে পুরুষদের পাশাপাশি নারী জাতির অবস্থা, শ্বেতাঙ্গ পুরুষ, শ্বেতাঙ্গ মহিলা, কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ, কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা এবং ক্রীতদাস পুরুষ, ক্রীতদাস মহিলাদের তুলনামূলক অবস্থার কথা জানা যায়৷ প্রাচীন কালের ইতিহাস থেকে ভারতে আর্য আক্রমণের পূর্বে তৎকালিন ভারতীয় মূলনিবাসী পুরুষ এবং নারী সকলেরই অবস্থা জানা যায়৷ মূলনিবাসী পুরুষদের পাশাপাশি মূলনিবাসী মহিলাদের উপর কি ধরণের নির্মম, নিষ্ঠুর ও পাশবিক অত্যাচার ব্রাহ্মণরা চালিয়েছিল৷ মহিলা সমাজকে তারা নারী মাত্রেই শূদ্রাণী আখ্যায়িত করেছিল, সেই সমস্ত ইতিহাস আজও ডঃ আম্বেদকরের লিখিত বিভিন্ন পুস্তকে এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা ঐতিহাসিকদের লেখনীতে বিদ্যমান৷
এটা পরিষ্কার যে ভারতের (Sc, St, Obc & Minorities) তথা 85 % জনগণ আজও স্বাধীন ভারতে পরাধীন মূলনিবাসী৷ সেই জন্য বর্তমান ভারতের Sc, St, Obc & Minorities সমাজের পুরুষরাই অশিক্ষিত, অবহেলিত, অপমানিত, অসহায়, সহায়-সম্পদ-বিষয়-আশায়হীন, ক্ষমতাহীন ও সর্বহারা রূপে গণ্য৷ শিক্ষাঙ্গনে, বাণিজ্যালয়ে, সংস্কৃতিতে, অর্থনীতিতে, সামাজিকতায়, রাজনৈতিক অঙ্গনে আইন-প্রশাসন-চাকুরী তথা সর্বত্রই শূদ্র, অস্পৃশ্য, আদিবাসী তথা মুসলমান পুরুষরা প্রতিযোগিতার বাইরে৷ সেখানে মহিলাদের উন্নয়ণের প্রশ্নটি গৌণ হয়ে পড়তে বাধ্য৷ যে ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজ ব্যবস্থা আমাদের পুরুষদেরকেই পদদলিত, মথিত, নির্যাতিত ও অপমানিত করে রাখতে সক্ষম হয়েছে সেখানে মহিলাদের উন্নয়ন তো অকল্পনীয়৷ তথাকথিত হিন্দু নামে যারা পরিচিত (Sc, St, Obc) তাদের মহিলাদের মধ্যে কয়েক শতাংশ মহিলা উচ্চশিক্ষা লাভ করে, কিছু উচ্চবেতনে সম্মানজনক চাকুরী লাভ করেছে এ কথা সত্য৷ সেই সুবাদে তারা ভালো ভালো শাড়ি আর দামী দামী গাড়ি ব্যবহার করার সুযোগ লাভ করেছে বলেই তারা নারী স্বাধীনতা লাভ করেছে বলে যারা বলছে তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছে৷ যেমন—চকচক করলেই সোনা হয় না, তদ্রুপ রঙচঙে পোষাক, ঝকঝকে গাড়ী আর প্রাসাদোপম বাড়ীতে বাস করলেই স্বাধীনতা লাভ করেছে এটা প্রমাণিত হয়না৷ আমি সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, বাবাসাহেব আম্বেদকরের লিখিত বইপত্র পড়ে জেনেছি, হিন্দু নারীরা আজও দ্বিগুণ (double) গোলামীর জিঞ্জীরে আবদ্ধ হয়ে রয়েছে৷ (1) শূদ্র নারীরা প্রথমতঃ ব্রাহ্মণ অথবা ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজব্যবস্থার গোলাম, (2) দ্বিতীয়তঃ তারা পুরুষদের ( স্বামীর) গোলাম৷ ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মে আজো মহিলারা নারী মাত্রেই শূদ্রাণী৷ সে শিক্ষিতা হলেও, চাকুরী বা উচ্চবেতনে সম্মানজনক উপার্জন করলেও৷ আজও উচ্চ ডিগ্রীধারী, উচ্চশিক্ষিতা, উচ্চ উপার্জনশীল শূদ্র নারীদেরকে পতি দেবতা (?) নিজ হস্তে স্ত্রীর সর্বশরীরে কেরোসিন তেল ছিটিয়ে দিয়ে জীবন্ত স্ত্রীকে পুড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে চলেছে৷ পার্থক্য শুধু এই যে, সেটা ছিল 1828 সাল আর আজ হল 2016 সাল৷ সেটা ছিল ঊনবিংশ শতাব্দী আর আজ হল একবিংশ শতাব্দী৷ তৎকালে ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজের নেতা ছিল ব্রাহ্মণ নেতা রামমোহন রায়ের পূর্বপুরুষগণ, আর আজ নেতৃ্ত্বের আসনে সমাসীন ব্রাহ্মণ নেতা মোহন ভাগবত৷ তখন ব্রাহ্মণদের স্বার্থে নারীদেরকে হিন্দু ধর্মের নামে সতীদাহ করে খুন করা হত৷ আর আজ নারী স্বাধীনতার নামে ব্রাহ্মণ্যবাদী মানসিকতা সম্পন্ন পুরুষরা তাদের পৌরুষকে বজায় রাখার জন্য কাপুরুষদের মত নিষ্ঠুরভাবে শক্তি প্রয়োগ করে নারীজাতির স্নেহ বাৎসল ও মমতাময়ী নারীদেরকে সম্মান প্রদানের পরিবর্তে অগ্নিদগ্ধ করে চলেছে৷ এ সবই অত্যন্ত চাতূর্যপূর্ণ খেলা৷ আর এই খেলার নাম হল ব্রাহ্মণবাদ৷ আপনারা শুনে রাখুন, এখনও মুসলমান নারীরা অগ্নিদগ্ধ হয়নি৷ এটা তাদের জন্য সৌভাগ্যই বটে৷
ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের মতে— " ভারতের মুসলমানরা মূলতঃ হিন্দু সমাজের তলানীর অংশ৷" অর্থাৎ শূদ্র ও অস্পৃশ্য সমাজের সর্বনিম্ন অজ্ঞ ও গরীব জাতি, গোষ্ঠীর লোকজনই ব্রাহ্মণ্যধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল৷ ঐ ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম কবুল করার পর তারা মওলানা-মৌলুবীদের খাঁচায় বন্দী হয়ে পড়েছে৷ ঐ নব্য মুসলমান পুরুষ বা মহিলারা ঐ সমস্ত ব্যবসায়ী মৌলুবী-মওলানাদের নিকট পরকালে বেহেশতের বিনিময়ে উত্তম উত্তম খাদ্যের যোগানদাতা হিসাবে গণ্য হচ্ছে৷ হিন্দু ধর্মে শিক্ষার কোন অধিকার যাদের ছিলনা, তারাই ইসলাম গ্রহণ করে মওলুবী ও মৌলানা সাহেবদের খাঁচায় বন্দী হয়ে, ইসলামে শিক্ষার অনুমতি থাকা সত্তেও অশিক্ষিত, নিরক্ষর, অজ্ঞ হয়ে রইল৷ পূর্বে ছিল ব্রাহ্মণদের সেবিকা এবং খাদ্যের যোগানদাতা এখন হল মওলুবী, মৌলানাদের সমর্থক ও অর্থ-খাদ্য যোগানদাতা৷ আর মৌলুবী-মওলানা সাহেবগণ মুসলমান সমাজের নারী ও পুরুষদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা এবং আধুনিক শিক্ষার কোন ব্যবস্থাই করেনি৷ তারা যে মাদ্রাসা শিক্ষা পরিচালনা করে তা বর্তমান ভারতে মুসলমান সমাজের উন্নয়ণে যথেষ্ট নয়৷ মুসলমান ধর্মীয় নেতারা ব্রাহ্মণদের মত মুসলমান পুরুষ ও মহিলাদেরকে অশিক্ষিত ও অনুগত করে রাখতে চায়৷ কারণ অশিক্ষিত ও অজ্ঞ- মূর্খরাই মওলানা-মৌলুবীদের অর্থ ও উত্তম খাদ্যের যোগানদাতা৷ প্রাচীনপন্থী মওলুবী-মওলানা সাহেবগণ আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ, সেইজন্য তারা গোটা সমাজকে শোষণ করার উদ্দেশ্যে অজ্ঞ করে রাখতে অধিক আগ্রহী৷ ব্রাহ্মণদের মত মৌলুবী সাহেবগণও আধুনিক শিক্ষায় আগ্রহী নয়৷ মুসলিম ধর্মীয় নেতারা সুস্পষ্টভাবেই ধর্মের বাণিজ্যিকিকরণ করতে সক্ষম হয়েছে৷ এখন মুসলমানরা অত্যন্ত গরীব কিন্তু মৌলুবীদের কোন সমস্যা নেই৷
ইংরেজরা ব্রাহ্মণদের সহযোগিতায় মুসলমানদেরকে পরাজিত করে ভারতে তাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে৷ ভারতে মুসলমান শাসনকালে মাদ্রাসা শিক্ষার মাধ্যমে বহু মুসলমান ও অমুসলমান নির্বিশেষে পুরুষরা লেখাপড়া শেখার সুযোগ লাভ করেছিল৷ এমনকি ব্রাহ্মণ নেতা রামমোহন রায় নিজেও মুসলমানদের মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ মাদ্রাসায় প্রধানতঃ পুরুষরাই পড়াশুনা করত এবং মহিলাদের জন্য শিক্ষার অনুমতি থাকা সত্তেও সেকালে নারী শিক্ষার সুব্যবস্থা না থাকায় মুসলমান মহিলারা উল্লেখযোগ্যভাবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি৷ তবে কিছু ব্যতিক্রম ছিলই৷ পরবর্তীকালে ভারতের রাজধানী শহর কোলকাতাকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণদের সহযোগিতায় ইংরেজদের উত্থান হয় এবং কোলকাতায় হিন্দু স্কুল, হেয়ার স্কুল, ডেয়ার স্কুল হয়ে, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে বাংলায় শিক্ষার নবজাগরণ ঘটে৷ তারপর স্যার সৈয়দ আহমদ খানের নেতৃত্বে উত্তর প্রদেশে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে মুসলমান সমাজে ইংরাজী শিক্ষার বিস্তার ঘটে৷ কোলকাতায় বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বিশেষভাবে মুসলমান মহিলাদেরকে শিক্ষার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন৷ পরবর্তীকালে 1947 সালে ইংরেজ ভারত থেকে বিদায় নেয়৷ আজকাল ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্যে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মুসলমান পুরুষদের পাশাপাশি মুসলমান মহিলারা ও শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে৷ তবে Sc, St, Obc দের তুলনায় শতকরা হারে মুসলমান নারী শিক্ষার হার অনেকটা হতাশাব্যঞ্জক৷ গ্রামের তুলনায় শহরে মুসলমান ছাত্র/ছাত্রীদের সংখ্যা কিছুটা আশাব্যঞ্জক৷
প্রসঙ্গতঃ একটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই, কিছু কিছু বুদ্ধিজীবীরা মনে করেন যে, নারী শিক্ষা বা নারী স্বাধীনতার অর্থ হল— নারী, উচ্চ শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে তার নারীসুলভ আচরণ, তার নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য, তার নমনীয়-কমনীয় বোধ, তার পোষাক-পরিচ্ছদ, তার স্বাভাবিক লজ্জাবোধ, সম্ভ্রমবোধ, তার স্বাতণ্ত্র্যবোধ, তার ধর্মচেতনা, তার পবিত্রতাবোধ সব কিছুকে জলাঞ্জলী দিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধকে ত্যাগ করবে৷ পাক-নাপাক, হালাল-হারাম, নেকী-গুনাহ, নামাজ-রোজা, হজ পালন, জাকাত প্রদান, নিজের সম্ভ্রমরক্ষার জন্য আবরণী (বোরকা, পর্দা) তার মাথার ওড়নাসহ সব কিছু ত্যাগ করে আধুনিকা, অত্যাধুনিকা, নির্লজ্জ, বেহায়া, লাজ-লজ্জাহীন, অর্ধোনগ্ন হয়ে ইউরোপকে অন্ধভাবে অনুসরণ করবে৷ তবেই নারী শিক্ষা, নারী স্বাধীনতা, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে৷ আমার প্রশ্ন— মাথায় কাপড় রেখে যদি মাদার টেরেজা সন্ত হতে পারেন, নোবেলবিজয়ী সমাজসেবিকা হতে পারেন, বেগম রোকেয়া, শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী, বাংলাদেশের বর্তমান ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া, এবং পশ্চিম বঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিরা যদি মাথায় কাপড় রেখে মহীয়সী নারী হিসাবে গণ্য হতে পারেন তাহলে, মুসলমান সমাজের শিক্ষিতা অথবা উচ্চ শিক্ষিতা মহিলারা মাথায় কাপড় রেখে মহীয়সী নারী হিসাবে সমাসেবিকা, সমাজকর্মী, রাজনৈতিক আন্দোলনের কর্মী, সমাজ সংস্কার আন্দোলনের কর্মী, লেখিকা, বক্তা, সাংবাদিক, প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হবেনা কেন ? যে সমস্ত বুদ্ধিজীবীরা নারী স্বাধীনতার নামে, নারী সমাজকে লজ্জা, সম্ভ্রম, আত্মমর্যাদা, মানবীয় মূল্যবোধ ত্যাগ করতে উৎসাহ দেন তাঁদেরকে আমি কূপমণ্ডুক বলে মনে করি৷ তাঁরা বহির্বিশ্ব সম্পর্কে অবগত নন৷
একজন চিকিৎসক, শিক্ষক, প্রফেসার, ইঞ্জিনিয়ার, অধিবক্তা, আইন বিশারদ, বিচারক, রাজনীতিবিদ এবং কূটনীতিবিদ সে পুরুষ বা মহিলা এটা তার মুখ্য পরিচয় নয়৷ বরং তার কর্ম জগতে দক্ষতার পরিচয়ের উপরই তার নিজস্ব পরিচিতি ঘটে৷ সে পুরুষ অথবা মহিলা, এটা সেখানে গৌণ৷ তদ্রুপ একজন মহিলা— চিকিৎসক, শিক্ষিকা, অধিবক্তা, যণ্ত্রশিল্পী, প্রশাসক, লেখিকা, রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিবিদ হিসাবে পরিচয়ের মানদণ্ড হবে তার কর্মদক্ষতা৷ সে পুরুষ কি মহিলা সেটা প্রশ্নই নয়৷ সেইভাবে একজন মহিলার পোষাক-পরিচ্ছদ, তার ধর্মীয় বিশ্বাস ও রীতিনীতি, তার খাদ্য- অখাদ্য, তার জাতি-কূল-গোষ্ঠী প্রভৃতি কোনভাবেই বিচার্য বিষয় নয়৷ সেটা সম্পূর্ণভাবে তার ব্যক্তিগত বিষয়৷ এর পরও কেউ যদি ঐ সমস্ত অবান্তর প্রশ্ন উত্থাপন করে তবে তাকে অবশ্যই ছিদ্রাণ্বেষী, নারী বিদ্বেষী অথবা অসহিষ্ণু ব্যক্তি বলা যেতে পারে৷ তবে মুসলমান নারী সমাজ উন্নত হলে, সমাজসেবায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করলে, সমাজ সংস্কারের কাজে সক্রিয়ভাবে আত্মনিয়োগ করলে অবশ্যই মুসলমান সমাজে কুসংস্কার দূরীভূত করার কাজ গতিশীল হবে, এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়৷ মুসলমান সমাজে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও যদি শিক্ষাসহ এই সমস্ত মহৎ কাজে অগ্রসর হয় তাহলে মুসলমানদের সঙ্গে সঙ্গে গোটা দেশের নিপীডিতা, নির্যাতিতা, লাঞ্ছিতা, ধর্ষিতা, তালাকপ্রাপ্তা ও অধিকার বঞ্চিতা নারীসমাজ ভীষণভাবে উপকৃত হবে৷
ভারতে ব্রাহ্মণ পণ্ডিত রামমোহন রায়ের সতীদাহ প্রথা বন্ধ করার প্রচেষ্টাকে সমাজ সংস্কার বলা হয়৷ ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধবা বিবাহ প্রচলন করার প্রচেষ্টা, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ সাহিত্যিকদের কাব্য, উপন্যাস, গল্প, নাটক ভিত্তিক সাহিত্য সৃষ্টিকে সমাজ সংস্কারের প্রচেষ্টা বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে৷ বাস্তব কথা হল উপরোক্ত সমস্ত ব্যক্তিগণই ব্রাহ্মণ সন্তান৷ ওরা সকলেই সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছে৷ সেই জন্য তাদের সামান্য কর্মও কর্ম প্রচেষ্টাকে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করা হয়ে থাকে৷ আসলে ঐ সমস্ত ব্রাহ্মণরাই সমাজকে শোষণ করার জন্য নানা ধরণের জাত-পাত, বর্ণ বিভাগ ও কুসংস্কারের জন্ম দিয়েছিল৷ যেমন রামমোহনের ব্রাহ্মণ পূর্বপুরুষরা সতীদাহ প্রচলন করে মহান হয়ে গেলেন, পুনরায় তাদেরই সন্তান সতীদাহ প্রথাকে বন্ধ করেও মহান হয়ে গেলেন৷ এরই নাম হল ব্রাহ্মণ্যবাদ৷ ঐ সমস্ত ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের তুলনায় বাবাসাহেব ডঃ আম্বেদকরের আন্দোলন ছিল আরো বহুব্যাপক৷ তিনি গোটা ব্রাহ্মণ্যবাদী ব্যবস্থা, বর্ণব্যবস্থা, জাতপাত ভিত্তিক উঁচুনিচু, ভেদাভেদসহ সমস্ত অন্যায় ও বৈষম্যকে ধ্বংস করে ন্যায়, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও করুণার আদর্শে উদ্বুদ্ধ একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ কায়েম করতে চেয়েছিলেন৷ এতবড় একটি সমাজ পরিবর্তনের মৌলিক আন্দোলনকে ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণ্যবাদী মানসিকতা সম্পন্ন বুদ্ধিজীবীরা সমাজ সংস্কার আন্দোলন হিসাবে মান্য করতে বা স্বীকার করতে প্রস্তুত হননি৷ এরও পশ্চাতে কার্যকর আছে ব্রাহ্মণ্যবাদ৷
যে সমস্ত ব্রাহ্মণ্যবাদী বুদ্ধিজীবীরা মুসলমানদেরকে নিজ ধর্মীয় আদর্শ ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে জলাঞ্জলী দিয়ে সমাজ সংস্কারের কাজে উদ্ধুদ্ধ করতে চান তাদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য নয় বরং মুসলমান সমাজের সামগ্রিক উন্নয়ণের জন্যই সমাজের সংস্কার প্রয়োজন৷ এই সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে শুধুমাত্র সেই সমস্ত মুসলমান, যারা— বর্তমান ভারতের ইতিহাস, ভূগোল, জাতপাত ভিত্তিক সমাজ কাঠামো, রাজনীতি, ধর্ম, বর্ণ, ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং প্রাচীন ভারতের ইতিহাস, তৎসহ ইসলাম, ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা, ইসলামী ইতিহাস, ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধ এবং সর্বোপরি ন্যায়, মানবতা,সাম্য, গণতন্ত্র, ভারতের সংবিধান ও আইন-কানুন প্রভৃতি বিষযে অগাধ জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম৷ মুসলিম পুরুষদের পাশাপাশি মুসলিম মহিলাদেরকেও অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে৷ এই মানসিকতা নিয়ে যাঁরা কাজ করতে চান তাঁদেরকে স্বাগত জানাই৷
মানবতার জয় হোক—
মানুষের কল্যাণকামীদের জয় হোক৷
নারী সমাজের উন্নয়ণ ও কল্যাণ হোক৷
নারী সমাজের মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত হোক৷
ন্যায়, সত্যপন্থীদের সাহায্য কামনা করি৷
মুলনিবাসি বই ছড়িয়ে দিন
ReplyDeleteপিডি এফ বইয়ের ধারনা কাজে লাগিয়ে
ReplyDeleteএখন যেকোন দেশে ও অনেক মানুষের কাছে মুলনিবাসি বইপুস্তক খুব সহজে ছড়িয়ে দেয়া যায়।
তাই এই পন্থা অবলম্বল করে মুলনিবাসি সাহিত্য ছড়িয়ে দিতে হবে সবার কাছে,,,
বাংলাদেশ